1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইন আসছে

হাফসা হোসাইন১ অক্টোবর ২০০৮

সেই কৈশোর থেকেই আর দশটা মেয়ের মতোই ছোট্ট আর খুবই সাধারণ এক স্বপ্ন ছিলো মরিয়মের চোখে৷ সবুজ ধানক্ষেতের মাঝে সাজানো সংসার হবে তার৷ সংসারে থাকবে দায়িত্বশীল এক স্বামী৷ ভালোবাসার ছোট্ট ঘর আলো করে থাকবে সোনামনিরা৷

https://p.dw.com/p/FSTT
অ্যাসিড তাদের জীবনটাকেও ঝলসে দিয়েছেছবি: AP

কিন্তু ওইটুকুন স্বপ্নই তার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো এক রাতে৷ স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির দাবি মতো বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে না পারায় মরিয়মের (ছদ্মনাম) গায়ে অ্যাসিড মারলো পাষন্ড স্বামী৷ যাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছে মরিয়ম সেই মানুষটিই কিনা ঝলসে দিলো তার চোখসহ সারা শরীর৷ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠা মরিয়মকে ফেলে সেই রাতেই গা ঢাকা দিলো স্বামী জমির (ছদ্মনাম)৷

অ্যাসিডদগ্ধ মরিয়ম এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ছে৷ চিরকালের মতো অন্ধ হতে চলেছে সে৷ মেয়েটির চোখের আলো ধরে রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিত্‌সকরা৷

মরিয়মের মতো অসংখ্য গৃহবধু যৌতুকলোভী স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়তই৷ কখনোবা প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার অপরাধে বখাটে প্রেমিকের এমন হিংস্র ক্রোধের শিকার হচ্ছে কিশোরী বা তরুণী৷

এমন জঘন্য অপরাধ করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যাচ্ছে অ্যাসিড সন্ত্রাসীরা৷ মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলীর মতে, অনেক সময় পুরুষশাসিত রক্ষণশীল সমাজের আশ্রয়েই বিচার এড়াচ্ছে তারা৷ তাছাড়া সাক্ষী আর সুষ্ঠু তদন্তের অভাবেও বিচারের বাইরে থাকছে পাষন্ডরা৷

অ্যাসিড সন্ত্রাসীদের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করছে সালমা আলীর ন্যাশনাল উইমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন৷ অ্যাসিডদগ্ধদের বিনামূল্যে আইনী সহায়তা এবং তাদের চিকিত্‌সা ও ক্ষতিপূরণ হামলাকারীর কাছ থেকে যোগাড় করে দিচ্ছে সংস্থাটি৷

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকাররা শারিরীক বৈকল্যের কারণে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে৷ চরম শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাটাচ্ছে একাকী জীবন৷

অ্যাসিডদগ্ধদের চিকিত্‌সা ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন- এএসএফ৷

বলা হচ্ছে, বর্তমানে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত স্তরে অ্যাসিড সন্ত্রাসের মাত্রা কিছুটা কমেছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এই সন্ত্রাস বাড়তে পারে উচ্চবিত্ত সমাজে৷ এএসএফ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা বলছে, ২০০২ সালের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণে নারীদের উপর অ্যাসিড নিক্ষেপের মাত্রা বাড়ছে৷ সব ধরনের অ্যাসিড বিক্রির ব্যাপারে কঠোর আইন করার দাবি জানিয়ে আসছে ন্যাশনাল অ্যাসিড কন্ট্রোল কাউন্সিল৷

এদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাসিড সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লোকজনকে আটকে রাখার জন্য আইন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ তাছাড়া এ ধরনের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে পুলিশ সদরদপ্তরে মনিটরিং অফিস স্থাপন করার কথাও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷

২০০২ সালে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন করার পর গত ৬ বছরে অ্যাসিড নিক্ষেপের ১,৪৪০টি মামলা হয়েছে৷ এ ধরনের মামলায় এ পর্যন্ত ২৫৪ জনকে বিভিন্ন ধরনের দণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে ১১ জনের বিরুদ্ধে৷ তবে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় এখনও কার্যকর হয়নি কারো মৃত্যুদণ্ড৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাসিড সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য কোন সন্ত্রাসীর বিচারের রায় সন্তোষজনক মনে না হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যাপারে বাদী পক্ষকে উত্‌সাহিত করছে সরকার৷