অ্যাসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইন আসছে
১ অক্টোবর ২০০৮কিন্তু ওইটুকুন স্বপ্নই তার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো এক রাতে৷ স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির দাবি মতো বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা আনতে না পারায় মরিয়মের (ছদ্মনাম) গায়ে অ্যাসিড মারলো পাষন্ড স্বামী৷ যাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছে মরিয়ম সেই মানুষটিই কিনা ঝলসে দিলো তার চোখসহ সারা শরীর৷ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠা মরিয়মকে ফেলে সেই রাতেই গা ঢাকা দিলো স্বামী জমির (ছদ্মনাম)৷
অ্যাসিডদগ্ধ মরিয়ম এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ছে৷ চিরকালের মতো অন্ধ হতে চলেছে সে৷ মেয়েটির চোখের আলো ধরে রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিত্সকরা৷
মরিয়মের মতো অসংখ্য গৃহবধু যৌতুকলোভী স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়তই৷ কখনোবা প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার অপরাধে বখাটে প্রেমিকের এমন হিংস্র ক্রোধের শিকার হচ্ছে কিশোরী বা তরুণী৷
এমন জঘন্য অপরাধ করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যাচ্ছে অ্যাসিড সন্ত্রাসীরা৷ মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলীর মতে, অনেক সময় পুরুষশাসিত রক্ষণশীল সমাজের আশ্রয়েই বিচার এড়াচ্ছে তারা৷ তাছাড়া সাক্ষী আর সুষ্ঠু তদন্তের অভাবেও বিচারের বাইরে থাকছে পাষন্ডরা৷
অ্যাসিড সন্ত্রাসীদের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করছে সালমা আলীর ন্যাশনাল উইমেন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন৷ অ্যাসিডদগ্ধদের বিনামূল্যে আইনী সহায়তা এবং তাদের চিকিত্সা ও ক্ষতিপূরণ হামলাকারীর কাছ থেকে যোগাড় করে দিচ্ছে সংস্থাটি৷
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকাররা শারিরীক বৈকল্যের কারণে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে৷ চরম শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাটাচ্ছে একাকী জীবন৷
অ্যাসিডদগ্ধদের চিকিত্সা ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন- এএসএফ৷
বলা হচ্ছে, বর্তমানে সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত স্তরে অ্যাসিড সন্ত্রাসের মাত্রা কিছুটা কমেছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের আশংকা, এই সন্ত্রাস বাড়তে পারে উচ্চবিত্ত সমাজে৷ এএসএফ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থা বলছে, ২০০২ সালের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণে নারীদের উপর অ্যাসিড নিক্ষেপের মাত্রা বাড়ছে৷ সব ধরনের অ্যাসিড বিক্রির ব্যাপারে কঠোর আইন করার দাবি জানিয়ে আসছে ন্যাশনাল অ্যাসিড কন্ট্রোল কাউন্সিল৷
এদিকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাসিড সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লোকজনকে আটকে রাখার জন্য আইন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার৷ তাছাড়া এ ধরনের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে পুলিশ সদরদপ্তরে মনিটরিং অফিস স্থাপন করার কথাও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷
২০০২ সালে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইন করার পর গত ৬ বছরে অ্যাসিড নিক্ষেপের ১,৪৪০টি মামলা হয়েছে৷ এ ধরনের মামলায় এ পর্যন্ত ২৫৪ জনকে বিভিন্ন ধরনের দণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে ১১ জনের বিরুদ্ধে৷ তবে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় এখনও কার্যকর হয়নি কারো মৃত্যুদণ্ড৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাসিড সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য কোন সন্ত্রাসীর বিচারের রায় সন্তোষজনক মনে না হলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ব্যাপারে বাদী পক্ষকে উত্সাহিত করছে সরকার৷